জন্ম

মুহাম্মদ (সঃ) মক্কায় আরবে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর মা  আমিনা, জহুরা পরিবারের ওহাব এর পুত্র আবদ মানাফ এর কন্যা । রাসুলের পিতা আব্দুল্লাহ, আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে। তাঁর বংশতালিকা ইসমাঈল পুত্র ইব্রাহীমের চল্লিশ প্রজন্মের মধ্যে ফিরে আসা ইসলামিক আদর্শ পরিবার।

মুহাম্মদের (সঃ) পিতা তার জন্মের আগে মারা যান, এবং তার মা ও  তাকে অনাথ করে কয়েক বছর পরে মারা যান।

মক্কার অভিজাত পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী, তিনি তার শৈশবে পালক মা দ্বারা একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হতে লাগলেন। তিনি তার পালক মা, হালিমার সঙ্গে বসবাস করতে থাকলেন কয়েক বছরের জন্য। হালিমা কয়েকবার তার মাকে পরিদর্শন করতে মক্কায় নিয়ে জান। তার মায়ের মৃত্যুর পর তাঁকে তার দাদা আব্দুল মুত্তালিবের হেফাজতে অধীনে ন্যস্ত করা হয়। দাদার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের অধীনে আসে। এই সময়ে তিনি মক্কার চারপাশে ভেড়ার পাল রক্ষণাবেক্ষণ করেন  এবং সিরিয়া তে চাচার সাথে বাণিজ্য যাত্রা করেন।

 

যৌবন

তার যৌবন এর সময় থেকে, তিনি ঈশ্বরের একত্ব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসি ছিলেন।  তিনি একটি খুব সহজ জীবন যাপন করতেন এবং তিনি অহংকার ঘৃণা করতেন। তিনি দরিদ্র, বিধবা ও এতিমদের সমব্যথী ছিলেন এবং তাদের সাহায্য করে তাদের দুঃখ কষ্টের ভাগ নিতেন। তিনি সব অনৈতিক কাজ, যা তরুণদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, যেমন জুয়া, মদ্যপান, এবং অশ্লীলতা এড়িয়ে চলতেন। তিনি সিদ্দিক (সত্যবাদী) এবং আল-আমিন (বিশ্বস্ত) নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি সবসময় তার স্বদেশ,মক্কায় বিবাদী পক্ষের মধ্যে একজন বিশ্বস্ত বেক্তি ছিলেন।

 

বিবাহ

যখন তিনি প্রায় ২৫ বছর বয়সে, তখন তার চাচা, খাদীজা নামের একজন ধনী বিধবার কাফেলার সঙ্গে কাজ করতে তার প্রতি আহ্বান জানান।  তিনি তা  গ্রহণ করেন এবং সিরিয়া যাত্রা হাতে নেন। তিনি  দূরদর্শিতা এবং দায়িত্ব নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় মুনাফা নিয়ে ফিরেন। খাদিজা  মুহাম্মদের সৎ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দেখে, তিনি তাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেন,  এতে মুহাম্মদ সম্মতি প্রদান করেন। তাদের বিবাহিত জীবন সুখী ছিল। তাদের সন্তান ছিল। খাদিজা ৬৫ বছর বয়সে মারা যান; এ সময় পর্যন্ত তিনিই তার একমাত্র স্ত্রী হিসেবে ছিলেন।

 

রিসালাত

মুহাম্মদ একটি মুশরিকী সমাজে (অনেক দেবতার পৌত্তলিক পূজা) অভান্তরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুব দুঃখ পেতেন তার পরিবেষ্টিত দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজের অবস্থা দেখে। তিনি প্রায়ই মক্কার কাছাকাছি একটি পর্বত হেরা গুহায় যেতেন, যা পরবর্তীতে জাবাল আন-নূর (আলো পর্বতমালায়) নামে পরিচিত। সেখানে তিনি ধ্যান করতেন এবং বিরাজমান অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্বত সমাজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় মগ্ন থাকতেন। সেখানে তিনি প্রায়ই গভীর চিন্তা মগ্ন থাকতেন, মহাবিশ্বের অদৃশ্য, সর্বব্যাপী ঈশ্বরের নিয়ে।

এক রাতে, যখন তিনি গুহায় ধ্যান অবস্থায় ছিলেন, ফিরিশতা জিব্রাইল এসে প্রবল শব্দে তার কানে প্রতিধ্বনিত করলেন। জিব্রাইল তাঁকে বল্লেন আপনাকে পড়তে বলা হয়েছে, , “তুমি পাঠ কর !”

মুহাম্মদ কি করতে হবে তা বুঝতে পারছিলেন না। তাকে পড়তে বলা হয়েছে। তিনি জবাব দিলেন “আমি পড়তে জানি না.” আবার তাঁকে জিব্রাইল বললেন, “পাঠ কর!” মুহাম্মদ বললেন, “আমি পড়তে জানি না।” জিব্রাইল তাকে আদেশ করলেন, “তুমি পাঠ কর!” মুহাম্মদ বললেন, “আমি অশিক্ষিত!” (তিনি পড়তে ও লিখতে পারতেন না )।

পরে জিব্রাইল মুহাম্মদ (সঃ) কে পাঠ করে শুনাতে থাকেন। এটা ছিল কোরআন-এর শুরু যা ২৩ বছর সময়ের মধ্যে নাযিল হয় সমগ্র বিশ্ব-জাহানের সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আল্লাহর পক্ষ থেকে।

“পড়ুন: আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন- সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। পড়ুন: আর আপনার রব মহামহিমাম্বিত, যিনি কলমের সাহা্য্যে শিক্ষা দিয়েছেন- শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।” (সূরা আলাক ৯৬: ১-৫)

এটি ছিল মুহাম্মদ (সঃ)কাছে অবতীর্ণ প্রথম আয়াত। সে সময়ে তার বয়স ছিল ৪০ বছর। আয়াতসমূহ ২৩ বছর ধরে তার নিকট সময়ে সময়ে এসেছিল।

আয়াতসমূহের এই সিরিজ বিন্যাসক্রম করা হয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) দেওয়া ঐশিক নির্দেশনা অনুযায়ী এবং পরে একটি বই আকারে সংগৃহীত হয়।

এটাই হল বই কুরআন(আবৃতি)। কুরআনের আয়াতের অধিকাংশের অর্থ পরিষ্কার । কিছু আয়াত অন্য আয়াতের সঙ্গে একত্রে ব্যাখ্যা করা হয় । যা রাসুল ব্যাখ্যা করতেন তার কথায়, কর্ম ও মৌন অনুমোদন দ্বারা একসঙ্গে এটি সুন্নাহ (নবীর ঐতিহ্য) হিসাবে পরিচিত হয়। কোরআন ও সুন্না একসঙ্গে তাদের জন্য জীবনধারা যারা তাদের জীবন আল্লাহর পথে নিজে কে সমাপন করে । যারা কুরআন ও রাসুল কে অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করবে, আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তারা দুনিয়া এবং আখিরাতে সুখি হবে।

 

বাঁধা সমূহ

নবী (সঃ) আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করে, তখন কয়েকজন তাঁর কথায় সারা দেয়। তাদের অধিকাংশই তাঁর পরিবারের সদস্য বা সমাজের সর্বনিম্ন পদমর্যাদার অধিকারি ছিলেন।তাদের মধ্যে খাদীজা, আলী , যায়েদ ও বিলাল ছিলেন। তিনি সবার সামনে যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার করা শুরু করলেন তখন তাঁর অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেল কিন্তু একই সময়ে অমাত্য ও নেতাদের মত অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম রক্ষার অজুহাতে তারা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল যাতে নতুন ধর্ম আসতে না পারে।

যখন মক্কার সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট সদস্যদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তখন কিছু লোকের মনোবল বেড়ে যায়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উসমান , জুবায়ের ইবনে আওয়া আবদুর রহমান ইবনে আওফ , তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ , সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস , আরকাম ইবনে আবী আরকাম , ওবায়দুল্লাহ , সাঈদ ইবনে যায়েদ , আমর ইবনে নুফাইল , ফাতেমা ( নুফাইল এর স্ত্রী ছিলেন ) , আসমা বিনতে আবু বকর , হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ , জাফর ইবনে আবি তালিব এবং আরও অনেকে।

এই দলের ইসলাম গ্রহণ করার আগে নবীর নিকটতম অনুগামীদের মধ্যে প্রধম ছিলেন আবু বকর, তাঁর প্রতি নবী (সঃ) যথেষ্ট অভিভূত ছিলেন। নবী (সঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেন: “আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, একমাত্র আবু বকর ছাড়া প্রত্যেকের মধ্যেই কিছু না কিছু দ্বিধার ভাব লক্ষ্য করেছি। যখন তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল কোন দ্বিধা ছাড়াই তিনি তা গ্রহন করেছিলেন।”

মক্কার কাফেরদের বিরোধিতার ফলে মুসলমানদের তীব্র যন্ত্রণা, নিপীড়ন, বিচ্ছিন্নতা ও বয়কটের স্বীকার হয়েছেন।নবী (সঃ) ছিলেন ধৈর্যশীল এবং মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য একটি উপায় খুঁজছিলেন। তিনি ইথিওপিয়া রাজা নাজ্জাশীকে,  মুসলমানদের তার দেশে দেশান্তরী হত্তয়া অনুমতি চান । নাজ্জাশী তাঁর রাজ্যে মুসলমান মুহাজিরদের স্বাগত জানান এবং তাদের মক্কার কাফের শাসকদের হস্তান্তর করতে অস্বীকার জানান।

( চলবে …)

source: Prophet of Islam: Muhammad

বিস্তারি আরও জানতে নিচের বই গুলো দেখতে পারেন ….

সীরাতে ইবনে হিশাম

 

 

 

 

 

 

 

বইটির প্রকাশনার তথ্য

বইঃ সীরাতে ইবনে হিশাম
মূলঃ ইবনে হিশাম
অনুবাদঃ আকরাম ফারুক
প্রকাশকঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা
ISBN-984-31-0614-8

আর্‌-রাহীকুল মাখতূম

Ar_Rahikul_Makhtum_Bangla

 

 

 

 

 

 

 

বইটির প্রকাশনার তথ্য

বইঃ আর-রাহীকুল মাখতূম
মূলঃ শাইখুল হাদীস আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.)
অনুবাদঃ আব্দুল খালেক রহমানী, মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ
প্রকাশকঃ তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ISBN-978-984-8766-06-4

 

ফেসবুকে যারা মন্তব্য করেছেনঃ

(Visited 6,227 times, 1 visits today)