ইস্তিগফার কি?

ইস্তিগফার শব্দের অর্থ হলো ক্ষমা চাওয়া বা প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় ইস্তিগফার  হলো বান্দা তার পূর্ব কৃতকর্মের উপর লজ্জাবোধ করে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাওয়া।

এবং এই ইস্তিগফারের মাধ্যমে মানুষ তার প্রভুর নিকট মর্যাদাবান ও গ্রহণযোগ্য বান্দা হয়ে থাকে।

যেই জন্য নবী কারীম (সা:) নিষ্পাপ হওয়া সত্বেও বেশী বেশী ইস্তিগফার করতেন এবং মানুষকে বেশী বেশী ইস্তিগফার করার জন্য বলতেন।

রসূলুল্লাহ (‎ﷺ) বলেন, ❝আল্লাহর ক্বসম! আমি দিনের মধ্যে ৭০ বারেরও অধিক ইস্তিগফার করি (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই) এবং তাওবাহ করি।❞ (বুখারী ৫/২৩২৪)

ইস্তিগফার কীভাবে করবো?

ইস্তিগফার যে কোন শব্দেই করা যায়। এমনকি ❝ইয়া আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন!❞ – বলে দুয়া করলেও হবে।

তবে রসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বাক্যে ইস্তিগফার করেছেন, সে বাক্যে ক্ষমা চাওয়া নিঃসন্দেহে অতি উত্তম! নিম্নে হাদীসে বর্নিত কিছু ইস্তিগফার দেয়া হলো! মুখস্থ করে নিতে পারেন ইন শা আল্লাহ।

১| ﺃﺳﺘﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ (আস্তাগফিরুল্লাহ)। শুধু ❝আস্তাগফিরুল্লাহ❞ বলা।

রসূল ‎(ﷺ) নামাজ শেষে ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলতেন।
(মুসনাদে আহমদ- ২২৪০৮)

২| ﺃﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺍﻟﻌَﻈِﻴﻢَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﺇﻟَﻪَ ﺇﻻَّ ﻫُﻮَ، ﺍﻟﺤَﻲُّ ﺍﻟﻘَﻴُّﻮﻡُ، ﻭَﺃﺗُﻮﺏُ ﺇﻟَﻴﻪِ

রাসূল ‎(ﷺ) বলেছেন, ❝যে ব্যক্তি এই দু‘আ পাঠ করবে সে জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হবে।❞
(আবু দাঊদ ১৫১৭)

৩| ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻰَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ

রসূলুল্লাহ (‎ﷺ) মাসজিদে অবস্থানকালে একই বৈঠকে একশো বার এ দু’আ পাঠ করেছেন এবং আমরা তা গণনা করেছি।
(আবু দাঊদ ১৫১৬)

৪| ﺃﺳﺘﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺃﺗﻮﺏ ﺇﻟﻴﻪ

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ❝আমি রাসূল (ﷺ)-র চাইতে কাউকে অধিক এই ইস্তিগফার বলতে শুনি নি – ❝আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি❞!❞ (নাসায়ী কুবরা ১০২১৫)

৫| ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ

রাসূলুল্লাহ (‎ﷺ) খুব বেশি বেশি এই দুয়া পড়তেন। এমনকি রাসূল ‎(ﷺ) ইন্তিকালের আগেও এই দুয়াটা অনেকবার করেছেন।
(সহীহ মুসলিম ৪৮৪)

তবে, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইস্তিগফার হলো, ❝সাইয়িদুল ইস্তিগফার❞।

৬| ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ، ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ، ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ، ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ، ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ

যেটি সকালে পড়লে ওই দিন সন্ধ্যার আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। আর সন্ধ্যায় পড়লে সকাল হওয়ার আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। (সহীহ বুখারী ৬৩০৬)

তওবা ও ইস্তিগফারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এসব উপকারিতার অন্যতম হলো-
১. অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফারের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়। বাগান ও শস্যে ভালো ফসল হয়, নদী-নালা থাকে জীবন্ত।
২. ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহতায়ালা উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকা দ্বারা সম্মানিত করেন। উপভোগ্য জীবন দান করেন।
৩. দ্বীন পালন সহজ হয় এবং কর্মজীবন হয় সুখের।
৪. গোনাহখাতা মাফ হয়। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা কমে যায়।
৫. ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনিয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেওয়া হয়।
৬. মানব ও জীন শয়তানের কু-প্রভাব থেকে তাকে হেফাজত করা হয়।
৭. দ্বীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
৮. আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা অর্জিত হয়।
৯. বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১০. সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের হয়। দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হয়।
১১. অকল্পনীয় রিযিকের ব্যবস্থা হয়। বেকারত্ব দূর হয়।
১২. আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জিত হয়। তওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।
১৩. মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।
১৪. হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচণ্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।
১৫. কিয়ামাতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে।
১৬. মন্দ কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
১৭. আরশ বহনকারী ফেরেশতারাও তার জন্য দোয়া করেন।

সহিহ হাদিস থেকে তথ্যসূত্রসহ এখানে মোট এগারোটি ইস্তিগফারের দোয়া উল্লেখ করা হলো।

ইস্তিগফার: নম্বর -১
আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে এই ইস্তিগফারটি অধিক মাত্রায় পড়তেন।

ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি

অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি।
সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ১৮৮৬

ইস্তিগফার: নম্বর -২
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি
ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ وَأَتُوْبُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ

বাংলা উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি]

অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি।
সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯২৮, হাদিসটি বিশুদ্ধ

ইস্তিগফার: নম্বর -৩
আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব ?’
নবীজি বলেন, তুমি বলো

ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﻛَﺮِﻳﻢٌ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲْ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন কারীম, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা’অ্ফু ‘আন্নী]

অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, মহানুভব! তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও।
[সহীহ তিরমিযী : ৩৫১৩, হাসান সহিহ]

রামাদানের শেষ দশটি রাতে এই দু‘আটি অধিক পরিমাণে পাঠ করতে হবে। পাশাপাশি অন্য যেকোনো সময়, যেকোনো মাসেও পড়া যাবে।

ইস্তিগফার: নম্বর -৪
ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমরা গুণে দেখতাম যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই মজলিসে ১০০ বার পর্যন্ত পাঠ করছেন।

ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ

বাংলা উচ্চারণ: রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম

অর্থ: হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন; আমার তাওবাহ্ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবাহ্ কবুলকারী পরম দয়াময়।
[তিরমিযি: ৩৪৩৪, আবু দাউদ: ১৫১৬, হাদিসটি বিশুদ্ধ]

শুধু নামাজের বৈঠকেই নয়, যেকোনো সময় এই ইস্তিগফার পড়া যাবে।

ইস্তিগফার: নম্বর -৫
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এই দু‘আ (ইসতিগফার) পড়বে, তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে—যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নকারী হয়।’’

ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ

বাংলা উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লা হাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি

অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই—তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী—এবং আমি তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি।
[আবু দাউদ: ১৫১৭, তিরমিযি: ৩৫৭৭, হাদিসটি বিশুদ্ধ]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহাল ‘আযীম, আল্লাযি… (বাকি অংশে কোনো পরিবর্তন নেই)।’’
[তিরমিযি: ৩৫৭৭, হাসান]

ইস্তিগফার: নম্বর -৬

সাইয়িদুল ইস্তিগফার
সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার
সাইয়িদুল ইসতিগফার বা ইস্তিগফারের নেতা।

ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻟَﺎ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু আ‘উযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবূ-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূ-উ বিযানবী, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা] [অবশ্যই আরবি দেখে শিখুন]

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমারই গোলাম। তুমি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছো, সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছো তা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।’’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এ দু‘আটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৩০৬]

ইস্তিগফার: নম্বর- ৭
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো মজলিসে (বৈঠকে) বসলো, যেখানে সে অনর্থক অনেক কথা বলেছে, সে যদি ওই মজলিস থেকে ওঠার আগেই এই দু‘আটি বলে, তবে আল্লাহ্ তার ওই মজলিসের বিষয়াদির কাফফারা (প্রায়শ্চিত্য) করে দেবেন।’’

ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ، ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻙَ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ

[সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বি‘হামদিকা আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা]

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র; প্রশংসা কেবল তোমারই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি—তুমি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তোমার নিকট তাওবাহ্ করছি।
[তিরমিযি: ৩৪৩৩, হাসান সহিহ গারিব]

দু‘আটি যেকোনো সময় পড়তে পারবেন। এই দু‘আটিতে আল্লাহর প্রশংসা, পবিত্রতা, শাহাদাহ সব আছে। ফলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

নামাজের ভিতরের ইস্তিগফারসমূহ

ইস্তিগফার: নম্বর -৮
আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরআনের নির্দেশ (সূরা আন-নাসরের অনুবাদ দেখুন) অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় গিয়ে এই ইস্তিগফারটি পড়তেন—
ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍللّٰهُمَّ رَبَّنَا ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ

বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী,

অর্থ: হে আমাদের রব—আল্লাহ! আপনি মহান; প্রশংসা কেবল আপনারই। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।
[বুখারি: ৭৯৪]

যেকোনো সময় পড়তে পারেন।

ইস্তিগফার: নম্বর-৯
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় পড়তেন।

ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ

[রাব্বিগফিরলি, রাব্বিগফিরলি]

অর্থ: হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। [সহিহ মুসলিম: ৭৭২]

ইস্তিগফার: নম্বর -১o
আবু বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন একটি দু‘আ শিখিয়ে দিতে, যা তিনি নামাজে পড়বেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি শিখিয়ে দেন, যা দু‘আ মাসূরা নামে পরিচিত। (এটি নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরুদের পর পড়বেন)

ﺍَﻟﻠّٰﻬﻢَّ ﺇِﻧِّﻲْ ﻇَﻠَﻤْﺖُ ﻧَﻔْﺴِﻲْ ﻇُﻠْﻤًﺎ ﻛﺜِﻴﺮًﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧﻮْﺏَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻧْﺖَ، ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓً ﻣِّﻦْ ﻋِﻨْﺪِﻙَ، ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲْ، ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻐَﻔُﻮْﺭُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢ

অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি; তুমি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা করো এবং আমার উপর দয়া করো। তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[সহিহ বুখারি: ৮৩৪]

এটি কেবল নামাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যেকোনো সময় পড়া যায়। সর্বদা মুখে ইস্তিগফার আর আল্লাহর জিকির করার চেষ্টা করবো এতে ঈমানের আসল স্বাদ পাওয়া যায়।

ইস্তিগফার: নম্বর – ১১
আরো একটি ইস্তিগফার, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে সালাম ফেরানোর আগে পড়তেন।

ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻣَﺎ ﻗَﺪَّﻣْﺖُ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺧَّﺮْﺕُ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺳْﺮَﺭْﺕُ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻨْﺖُ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺳْﺮَﻓْﺖُ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﻪِ ﻣِﻨِّﻲْ

বাংলা উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া-মা আখখারতু, ওয়া-মা আসরারতু ওয়া-মা আ’লানতু, ওয়া-মা আসরাফতু, ওয়া-মা আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী

অর্থ: হে আল্লাহ্, আমি আগে-পরে যত গুনাহ করেছি, তা মাফ করে দাও। যেসব গুনাহ গোপনে করেছি এবং যেগুলো প্রকাশ্যে করেছি (সব) মাফ করে দাও। যত বাড়াবাড়ি করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে দাও এবং যেগুলো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো, সেগুলোও মাফ করে দাও। [সহিহ বুখারি শরীফ : ৬৩৯৮]

অর্থ: হে আল্লাহ্, আমি আগে-পরে যত গুনাহ করেছি, তা মাফ করে দাও। যেসব গুনাহ গোপনে করেছি এবং যেগুলো প্রকাশ্যে করেছি (সব) মাফ করে দাও। যত বাড়াবাড়ি করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে দাও এবং যেগুলো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো, সেগুলোও মাফ করে দাও। [সহিহ বুখারি শরীফ : ৬৩৯৮]

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিঃসন্দেহে তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদের সম্পদ, সন্তান দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য উদ্যান ও প্রবাহিত নদ-নদী স্থাপন করবেন।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)

✨ ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে গোনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করো। অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও (ভবিষ্যতে গোনাহ না করার এবং আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন করার দৃঢ় সংকল্প করো)। তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন।’ (সূরা হুদ-৩)
✨ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগ্‌ফার পাঠ করে, আল্লাহতায়ালা তাকে সর্বপ্রকার বিপদাপদ হতে মুক্ত করবেন, সবরকম দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করবেন এবং তার জন্য এমন স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারেন না।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮)
✨ হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ই-ব-লি-স তার রবকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনার সম্মান ও ই-জ্জ-তের শপথ করে বলছি, যতক্ষণ বনী আদমের দেহে প্রাণ থাকবে ততক্ষণ আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে থাকব। ফলে আল্লাহ বললেন, আমি আমার সম্মান-প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব যতক্ষণ তারা আমার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকব।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৩/২৯)
আল্লাহ আমাদের নিয়মিত ইস্তিগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।।
source: shorturl.at/AFPX4
ফেসবুকে যারা মন্তব্য করেছেনঃ

(Visited 168 times, 1 visits today)